প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা নওগাঁর কাঁচা মরিচ যাচ্ছে চট্রগ্রামে

196

ফারমান আলী, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁ জেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা মরিচের বাজার ইশ^রলক্ষীপুর বাজার। এই বাজারকে ঘিরে এলাকার মানুষের মাঝে মরিচ চাষের অনেক পরিবর্তন এসেছে। যেখানে কৃষকের একমাত্র ভরসা ছিল ধান চাষ। সেই জমিতে এখন সারা বছর মরিচের চাষ হচ্ছে। এখানকার প্রতিটি কৃষকের মজিতেই মরিচের মাচা রয়েছে। তবে মরিচের গ্রাম বললে ভূল হবে না। কাঁচা মরিচের বাজার বসে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভরা মৌসুমে এই বাজারে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ মন কাঁচা মরিচ কেনা বেচা হয়।

ইশ^রলক্ষীপুর গ্রামের কৃষক মন্টু শেখ বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। মরিচ ভালো হয়েছিল। প্রতিদিন ৫থেকে ৬মন মরিচ উঠতো। অতিরিক্ত বর্ষার কারণে মরিচের গাছ মরে গেছে। এখন গড়ে ৫কাঠা জমিতে মরিচের চারা গাছ জিবিত আছে। সেখান থেকে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কেজি মরিচ বিক্রি করতে পারছি।

বাশবাড়ীয়া গ্রামের মরিচ চাষি জয়নাল আবেদীন বলেন, এলাকার মরিচ মহিলারা বেশী তুলে। মহিলারা সংসারের কাজ সেরে মরিচ তুলার কাজে যায়। একজন মহিলা এক মৌসুমে মরিচ তুলে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করে। কিন্তু এখন সেটা আর হচ্ছে না। কারন ক্ষেতের বেশীর ভাগ মরিচ গাছ মরে গেছে।

মরিচ কিনতে আসা ব্যাপারি খোদা বক্স জানান, ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন আনাচে কানাচে আমরা এই বাজার থেকে প্রতিদিন মরিচ ক্রয় করে পাঠিয়ে দিই। যখন যে দামে বিক্রি হয় সেই দামে আমরা মরিচ ক্রয় করি।

তিনি আরো বলেন, তবে চাষিদের মরিচ বিক্রি করতে কোন অসুবিধা হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা মরিচ কিনতে এ বাজারে আসে।

ভরাডুবা গ্রামের মরিচ চাষি নাজমুল ইসলাম জানান, তিন বছর আগে ৫বিঘা মজিতে মরিচ চাষ করতে খরচ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকাই সেই বার মরিচের ফলন ভালো হয়েছিল। এবং ভালো দাম পেয়েছিলাম। সেই বছর যাবতীয় খরচ বাদে আয় হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ টাকা। তারপর থেকে প্রতি বছর কাঁচা মরিচের আবাদ করছি। কিন্তু এত টাকা আর কোন দিন চোখে দেখিনি।

তিন ভাই মোল্লা ট্রের্ডাসের মালিক আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা এই হাটে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনি। সেই মরিচ নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঢাকা ও চট্রগ্রমে বিক্রি করি। সারা বছর মরিচের বসে। তবে জ্যেষ্ঠ- আষাঢ় মাস থেকে শুরু হয়ে কার্তিক মাস পর্যন্ত পুরো দমে কেনা বেচা হয়।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিনিসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতিদিন এই বাজার থেকে ২শ মন মরিচ কিনে চট্রগ্রাম পাঠান। কোনও ঝামেলা নেই। তাই তারা এ বাজারে কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ব্যবসায়ীরা এসে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কেনেন। মরিচের ভালো দাম পান কৃষকরা। তাই এ বাজারে দিন দিন মরিচ বিক্রি বেড়েই চলছে। কৃষকের কাছে টাটকা ও তুলনামুলক কমদামে কাঁচামরিচ পাওয়া যায়। মুনফা ভালো হওয়ায় তারা ৫ বছর ধরে এখানে মরিচ কিনতে আসেন।

মরিচ বিক্রি করতে আসা মিনহাজুল ইসলাম বাবু, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো, কাঙিক্ষত মূল্য পাওয়া যায়, ওজনে কাটচুপি না হওয়া এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারা যায় তাই তারা এ বাজারে মরিচ বিক্রি করতে আসেন।

সফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম বাচ্ছু জানান, এই বাজারকে ঘিরে শুধু মহাদেবপুর উপজেলা নয়। আশেপাশের ৬টি উপজেলা নওগাঁ সদর, বদলগাছী, পাত্নীতলা, সাপাহার, পোরশা ও মান্দা থেকে মরিচ বিক্রি করা জন্য এই বাজারে আসেন। প্রায় ৬শ লোক প্রত্যাক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এই বাজারকে ঘিরে। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন এ বাজার থেকে ১০ থেকে ১২ ট্রাক মরিচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন কুমার বলেন, মহাদেবপুর উপজেলায় ৬০হেক্টর মজিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। ২শ জন কৃষককে কৃষি অফিস মরিচ চাষ বৃদ্ধির জন্য বিজ ও সার সরবরাহ করা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, নওগাঁ জেলায় ২শ ১০ হেক্টর মজিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। তবে মরিচ চাষের জন্য ৩০ হাজার জন কৃষককে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করবে সরকার। ইতোমধ্য আগাম মরিচ চাষ শুরু হয়েছে। কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সব সময় কৃষকের পাশে আছে এবং থাকবে। জেলার সবচেয়ে বেশী মরিচ চাষ হয় মহাদেবপুর উপজেলায় এবং দ্বিতীয় স্থানে বদলগাছী।

বাজারে গিয়ে জানা গেছে, ১০বছর পূর্বে নওগাঁ জেলা মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে এই ইশ^রলক্ষীপুর গ্রাম। এ গ্রামের নাম অনুসারে এই কাঁচা মরিচ বাজারের নাম করুন করা হয়েছে। আশেপাশের গ্রাম থেকে কৃষকরা সাইকেল করে কাঁচা মরিচ নিয়ে এই বাজারে আসছে। কয়েক ঘন্টা মধ্যে মরিচ বিক্রি করে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে।

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক প্রত্যাশা প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।