কালাইয়ে হাইকোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে চড়া ভাড়ায় প্রতি বস্তায় ৬০-৭০ কেজি আলু সংরক্ষণ

408
রকিবুল হাসান, ভ্রাম্যমাণ (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ-  জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ১০টি হিমাগারেই চলতি মৌসুমে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে চড়া ভাড়ায় প্রতি বস্তায় ৬০-৭০ কেজি আলু সংরক্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তার কথা ভেবে, মাহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নম্বর: ১৭৬১/২০১৭ এর আদেশে ২০১৯ সাল হতে দেশের সকল হিমাগার কর্তৃপক্ষকে প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির অধিক ওজনের আলু সংরক্ষণ না করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু এ উপজেলার সকল হিমাগারে চলতি মৌসুমে প্রতি বস্তায় ৬০-৭০ কেজি পর্যন্ত আলু সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
সরেজমিন হিমাগার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য বুকিং কার্ড বিতরণের সময় থেকেই,  কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির আলু আনতে নিষেধ করে, তা মাইকে প্রচার করা হয়। কিন্তু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য প্রতি বস্তায় ৬০-৭০ কেজির আলু আনছেন। হিমাগারে সংরক্ষনের জন্য আনা আলুর বস্তা ভেঙ্গে নতুন করে ৫০ কেজি ভর্তি করা দুঃসাধ্য। তাই সেগুলোই নেয়া হচ্ছে।
উপজেলার সরাইলের ‘এম ইসরাত হিমাগার লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপক রাহুল আলম, আঁওড়া-শিমুলতলীর ‘আর. বি স্পেশালাইজ্ড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপক আবু ছালেক এবং ‘পুনট কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষ জানান, গত বছর ৫০ কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের ২২০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। কিন্তু এ বছর ‘কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স এসোসিয়েশন’ বগুড়ার সিদ্ধান্তে- প্রতি কেজি আলু হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য পাঁচ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে ৫০ কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য কৃষকদের ২৫০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। ওজন বেশী হলে, প্রতি কেজি আলুর জন্য পাঁচ টাকা হারে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক জানান, ৬০-৭০ কেজি ওজনের বস্তা লোড বা আনলোড করতে তাদের কষ্ট হয়। এ কাজে তাদের কোমড় ও ঘাড় ভাঙ্গার ঝুকিও থাকে। কিন্তু কাজ না করলে তাদের সংসার চলেনা। তাই বাধ্য হয়েই বেশী ওজনের বস্তা লোড ও আনলোড করেন তারা।
৫০ কেজির বেশী ওজনের বস্তা লোড বা আনলোড করায় শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা খর্ব হয় এ কথা স্বীকার করে উপজেলার কাথাইল গোপীনাথপুরের ‘পল্লী হিমাগার লিমিটেড’ এর ব্যবস্থাপক রাহুল ইসলাম সাব্বির জানান, অন্য কেউ নয়, শ্রমিকদের এ অধিকার শ্রমিকরাই নিশ্চিত করতে পারবেন। কেননা, তারা (শ্রমিরা) ৫০ কেজির বেশি ওজনের বস্তা লোড বা আনলোড করতে অসম্মতি জানালে- মালিক পক্ষ, কৃষক বা ব্যবসায়িক প্রত্যেকেই বিপাকে পড়বে।
তিনি আরও জানান, এবার শুরুতেই হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য তারা ৫০ কেজির বেশি ওজনের আলুর বস্তা ফিরিয়ে দেন। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দেয়া আলুগুলো অন্যান্য হিমাগার কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন জানান, বিষয়টি অবগত হলাম। অভিযোগ সঠিক হলে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক প্রত্যাশা প্রতিদিন এর দায়ভার নেবে না।