
আইয়ুব আলী :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) মাত্র দুইদিনেই ভাইরাল হয়েছে বগুড়ার ‘মিনি জাফলং’ খ্যাত নতুন একটি দর্শনীয় স্থান। যেখানে ঈদের দিন থেকে ঢল নেমেছে ভ্রমণ পিপাসুদের। নদীর জলধারায় স্নানোৎসবে মেতে উঠেছেন নানা বয়সী মানুষ। প্রতিদিনই এখানে ভ্রমণ পিপাসুদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন তাঁরা। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটাতেও অনেকেই আসছেন ভাইরাল হওয়া ওই স্থানটি ঘুরতে। ফলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এখানে।
এমন পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সেখানে অস্থায়ী খাবারের দোকান বসিয়েছেন স্থানীয়রা। পাশাপাশি শিশুদের জন্য কিছু বিনোদনেরও ব্যবস্থা করেছেন তারা। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ‘মিনি জাফলং’ খ্যাত ওই স্থানটির রুপ ভিন্ন। যা সবারই প্রায় অজানা। এমনকি মিনি জাফলংয়ে পা ভেজালেই ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল। তাই গুজব উড়িয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন মহলটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রাম। ওই গ্রামটির মধ্যে দিয়েই বহমান বাঙালী নদী। এই নদীটির ওপর একটি ব্রীজও রয়েছে। যার নাম বেলগাছী ব্রীজ। বছরখানেক আগে বাঙালি নদী খনন করা হয়। ফলে ব্রীজের নিচে নদীর তলদেশে বালুর স্তর ও ছোট ছোট কুচি পাথর জমে যায়। যা ঈদের এক সপ্তাহ আগে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে নিজের ভেরিফাইড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোষ্ট দেন স্থানীয় দুই যুবক। যাকে স্থানীয়ভাবে ‘মিনি জাফলং’ বা ‘গরীবের জাফলং’ নাম দেওয়া হয়। এরপর মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এমনকি মাত্র দুইদিনেই আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট হিসেবে ভাইরাল হয়ে যায় ওই স্থানটি। পরবর্তীতে ঈদের দিন থেকে এই স্থানটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল নামে।
বৃহস্পতিবার (০৩ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও পর্যটকরা এখানে ছুটে আসছেন। তাদের কেউ নৌকা ভ্রমণ করছেন, কেউবা নদীর পাড়ে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। তবে বেশিরভাগই নদীর জলে স্নানোৎসবে মেতে উঠেছেন। এসময় কথা হয় শাহবন্দেগী ইউনিয়নের সাধুবাড়ী থেকে থেকে আসা গোলাম রব্বানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে সময় কাটানোর জন্য এখানে এসেছি। অনেক মানুষের সমাগম ঘটায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়েছে। এখানে এত মানুষের ভিড় আগে কখনো হয়নি। গাইবান্ধা থেকে আসা বাবু মিয়া বলেন, সিলেটের মতো এটি ‘নতুন জাফলং’ শোনে এখানে এসেছিলাম। তবে নদীবেষ্টিত এখানকার প্রাকৃতিক সুন্দর্য ভালো লাগলেও বেশি মানুষের পদচারনায় কাদাযুক্ত হয়ে স্থানটি নষ্ট হয়ে গেছে।
তথ্যানুন্ধানে জানা যায়, এই উপজেলার মির্জাপুর, ভবানীপুর ইউনিয়নে একাধিক ভারী শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে দুইটি কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য করতোয়া ও বাঙালি নদীতে ফেলা হয়। ফলে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই কারণে নদীর দীর্ঘ এলাকাজুড়ে মাছসহ সব জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। পানি খেয়ে মারা যাচ্ছে গবাদি পশু। নদীতে গোসল করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষজন। নদীতে খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা মৎস্য চাষিরা ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। তাই নদীর পানি ব্যবহার না করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনাও দেওয়া আছে। আর ‘মিনি জাফলং’ খ্যাত এলাকাটিও সেই বিষাক্ত নদীর আওতাভুক্ত। এমন পরিস্থিতে সেখানে বিনোদনপ্রেমীরা স্নানোৎসবে মেতে উঠেছেন। ফলে তারা ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন বলেন, নদীতে রাসায়নিক বর্জ্য ফেলায় ওই বিষাক্ত পানি ব্যবহারে মানুষের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ঘা-পচরাসহ বিভিন্ন চর্মরোগ। এছাড়া পেটের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এই পানি ব্যবহারের বিষয়ে সচেতনা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরো বলেন, ঈদের কয়েকদিনে সুঘাট ও ভবানীপুর এলাকার বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসে ভর্তি হন। পরে তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।
এই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। কোনো ভাবেই নদীর পানি বিষাক্ত হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও মন্তব্য করেন।