
ফ্যাসিবাদ উৎখাতের আন্দোলনের দুই অগ্রসেনানী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সাম্প্রতিক সৃষ্ট দূরত্ব এবং দল দুটির কর্মি সমর্থকদের মধ্যে সারাদেশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় সাধারন মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আগামী দিনে দেশের রাস্ট্র ক্ষমতার মূল দাবীদার দুই দলের মধ্যকার দ্বন্দ্বের সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা আবারও মাথা চাড়া দিতে পারে এমন আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন দেশের আপামর জনগণ।
প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মুুহর্তে বিএনপি-জামায়াতের অদূরদর্শী রাজনীতি দেশবাসীকে দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত করে তুলেছিল।
ঠিক এমনি মুহুর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানের সাক্ষাত ঘটে। লন্ডনে তারেক রহমানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাতটি পরিকল্পিত হোক কিম্বা কাকতালীয় যাই হোক দেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন ছিল এটি। জামায়াতের আমির দেশে ফেরার পর থেকেই রাজনীতির গতিপথ পাল্টাতে শুরু করেছে। এতদিন বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের জন্য মরিয়া হয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেও তাদের মাঝে হঠাৎ করেই পরিবর্তন ঘটেছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা নির্বাচন নিয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ভিন্ন সুরে কথা বলা শুরু করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। কারণ, এই সরকারকে তো আমরাই সমর্থন দিয়ে বসিয়েছি। শনিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াঁজো কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। আর ১২ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ। বৈঠকে নির্বাচনের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত হয়েছে- এমন প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, সবেমাত্র আমাদের একটি জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাকি জোট ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ, আমরাই তো সরকারকে সমর্থন দিয়েছি।
অপর দিকে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আসুন, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করি, সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো চলে গেছে। আমি প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার বিশ্বাসও আছে, তিনি সফল হবেন। আসুন, সবাই মিলে তাঁকে সাহায্য করে আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি।
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের হুংকার দিয়েও পিছূটান দেয়ার ঘটনা প্রমান করে বিএনপির মাঝে পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এই পরিবর্তনের পেছনের কারিগর দলের চেয়ারপারন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের সাথে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনার পর বেগম জিয়া তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার মাধ্যমে দলের নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। শুধু নির্বাচনের বিষয়েই তিনি বিএনপির নীতে বদল করিয়েছেন তা কিন্তু নয়। একসময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিএনপির সাম্প্রতিক বিরোধেরও লাগাম টেনে ধরেছেন বেগম জিয়া। দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থগুলোকে কুরবানি করে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী যে পলিসি গ্রহন করেছে এটাই এই মুহুর্তে দেশের জন্য কল্যাণকর বলে মনে করছেন সাধারন মানুষ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দূরদর্শি নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংষ্কার শেষেই দেশে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এটাই এখন জাতির প্রত্যাশা।